Table of Contents
হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল এক ধরনের যৌনক্রিয়া যা স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। শুধু যৌনসুখ লাভ করাই নয়, মানসিক দুশ্চিন্তা কমানো থেকে শুরু করে হরমোনের ভারসাম্য বজায়-সহ নানা উপকারী দিক রয়েছে হস্তমৈথুনের। নিয়মিত হস্তমৈথুনের ফলে প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে এবং প্রস্টেট সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাও কমে। কিন্তু যেমন কোনও কিছুই বেশি ভাল নয়, তেমনই অতিরিক্ত হস্তমৈথুনেরও খারাপ দিক রয়েছে। শারীরবৃত্তিয় ও মানসিক স্বাস্থ্যে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব পরোক্ষে সন্তানহীনতার সমস্যা ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলির পাশাপাশি এটি কী ভাবে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
হস্তমৈথুন বা স্বমেহন হল একধরনের কামোদ্দেপক প্রক্রিয়া। সুখদায়ক এই কাজটিতে অনেক সময় আসক্ত হয়ে পড়ে লোকজন। এর পিছনে অন্যতম একটা কারণ হল, হস্তমৈথুনের সময় মস্তিস্কে ডোপামাইন ও এন্ডোরফিনের মতো ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’ নিঃসৃত হয় যা মন ভাল করে দেয়, অবসাদ-দুশ্চিন্তার মতো মানসিক সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর করে। এই ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’গুলো ব্রেনকে বারবার উদ্দীপনামূলক কাজটি করার জন্য উস্কাতে থাকে। যার ফলে হস্তমৈথুনে আসক্তি তৈরি হতে পারে। দিনের অধিকাংশ সময় হস্তমৈথুন ও এই সংক্রান্ত ভাবনায় কেউ নিয়োজিত থাকলে সেটা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে বলা চলে। অনেকসময় এই অভ্যাস এতটাই গ্রাস করে ফেলে যে কোনও ভাবনাচিন্তা ছাড়াই হস্তমৈথুন করতে থাকে আসক্ত মানুষটি। এর ফলে সমাজে, কর্মক্ষেত্রে তাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সুস্থ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় বা গড়েই ওঠে না। এমনকী পরোক্ষে সন্তানহীনতার মতো সমস্যাও আসতে পারে।
অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে এই সমস্যাগুলি হতে পারে-
সন্তানহীনতার সঙ্গে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তবে হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত কয়েকটি শারীরবৃত্তিয় ও মানসিক অবস্থা সন্তানহীনতার সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
পুরুষদের বাবা হতে না পারার পিছনে হস্তমৈথুনের কোনও প্রভাব এখনও পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া যায়নি। বরং স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার মতো হস্তমৈথুনেও পুরনো শুক্রাণু বেরিয়ে যাওয়ার ফলে নতুন সুস্থ শুক্রাণু উৎপাদন বাড়ে। যার ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা বাড়ে বলে সাম্প্রতিক কিছু সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে। হস্তমৈথুনের জেরে শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়ার স্বপক্ষে প্রমাণও দেখিয়েছে গবেষণাগুলি। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে হস্তমৈথুন কখন ও কী ভাবে সমস্যার সৃষ্টি করে?
সাধারণ ভাবে বলা যায়, একজন পুরুষ মানুষ ২-৩ দিন বীর্যক্ষরণ না করলে পর তার বীর্যে সবচেয়ে ভাল মানের শুক্রাণু পাওয়া যায়। তাই সন্তানের জন্ম যখন লক্ষ্য, তখন সঙ্গমের দু’তিন দিন আগে হস্তমৈথুন বন্ধ রাখলেই ভাল। এমনকী সহায়ক গর্ভাধান পদ্ধতিতেও ল্যাবরেটরিতে বীর্য (সিমেন) জমা দেওয়ার দু’তিন দিন আগে যৌনসংসর্গ বা হস্তমৈথুন না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
এবার আসি অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক দিক প্রসঙ্গে। অতিরিক্ত অর্থাৎ দিনে একাধিকবার স্বমেহন করলে তার খারাপ প্রভাব পড়ে সন্তানসৃষ্টির প্রক্রিয়ায়। বিশেষ করে দিনে একাধিকবার হস্তমৈথুন যদি সপ্তাহভর চলতে থাকে বা টানা চার দিনও চলে। সাধারণ ভাবে একজন পুরুষের দেহ প্রতি সেকেন্ডে দেড় হাজারের মতো শুক্রাণু তৈরি করে এবং প্রতি বার বীর্যক্ষরণে মোটামুটি ৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে শুক্রাণু উৎপাদনের চেয়ে শরীর থেকে বেশি পরিমাণে শুক্রাণু বেরিয়ে যায়।
এছাড়া যারা হস্তমৈথুনের জন্য ‘সেক্স-টয়’ ব্যবহার করে, তাদের ক্ষেত্রে এর আর একটা খারাপ প্রভাব রয়েছে। কম দামী ‘সেক্স-টয়’গুলি নিম্ন মানের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে যায় ও তা নিম্নমানের হয়। ‘সেক্স-টয়ে’ এমন কিছু রাসায়নিকও থাকে যা থেকে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের সঙ্গে জড়িত মানসিক সমস্যাগুলি সরাসরি লিঙ্গ উত্থাপন, সঙ্গমের ক্ষমতা ও বীর্যপাতে প্রভাব ফেলে। হস্তমৈথুনে আসক্ত ব্যক্তির দাম্পত্য জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে, যার প্রভাব পড়ে সন্তানধারণে।
মহিলাদের হস্তমৈথুন মহিলাদের উর্বরতার উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণা দেখায় যে হস্তমৈথুন কোনভাবেই সংযুক্ত নয় ডিম্বস্ফোটন
পুরুষদের থেকে ভিন্ন, গর্ভধারণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মহিলাদের জন্য একটি প্রচণ্ড উত্তেজনা প্রয়োজন হয় না। একইভাবে, অর্গাজমের সময়, একজন মহিলা তার শরীর থেকে ডিম্বাণু বের করে না। প্রতিটি কার্যকলাপ অন্যটির থেকে স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হয়।
মহিলাদের শরীর প্রতি মাসে একটি ডিম উৎপন্ন করে, যেখানে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাশয় থেকে ফ্যালোপিয়ান টিউবে চলে যায় নিষিক্তকরণের জন্য। ডিম্বস্ফোটনের 12-24 ঘন্টার মধ্যে যদি ডিম্বাণু শুক্রাণু পায়, তবে মহিলার সফল গর্ভধারণের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি এই সময়ের মধ্যে কোন নিষেক না হয়, তাহলে ডিম্বাণু জরায়ুর আস্তরণে নেমে আসে, যা প্রতি মাসে মাসিকের সময় বের হয়। সুতরাং, মহিলারা বন্ধ্যা হওয়ার চিন্তা না করে হস্তমৈথুন করতে পারেন।
প্রকৃতপক্ষে, যে মহিলারা নিয়মিত হস্তমৈথুন করেন তাদের মানসিক চাপ কম থাকে এবং মেজাজ ভালো থাকে, যা শেষ পর্যন্ত সফল গর্ভধারণে সাহায্য করে।
হস্তমৈথুন মানব যৌনতার একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর দিক। এটি যে আনন্দ প্রদান করে তার বাইরেও, হস্তমৈথুন অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে যা পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের সামগ্রিক সুস্থতায় অবদান রাখতে পারে।
পরিশেষে, পুরুষদের জন্য হস্তমৈথুন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে আনতে পারে যদি তা নিয়ন্ত্রিতভাবে করা হয়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন আপনার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সরাসরি সন্তানহীনতার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের অভ্যাস জীবনে কিছু সমস্যা, জটিলতা ডেকে আনে। তাই হস্তমৈথুন যাতে আসক্তিতে পরিণত না-হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আসক্তি হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে নীচের পথগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. হস্তমৈথুনের ফলে কি চুল পড়ে যেতে পারে?
না, হস্তমৈথুনের সঙ্গে চুল পড়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর অতিরিক্ত অভ্যাস জীবনে অস্বাভাবিকত্ব ডেকে আনে। তবে, চুল পড়ার সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই।
২. হস্তমৈথুনের ফলে কি ওজন কমে যায়?
হস্তমৈথুনের সঙ্গে ওজন কমে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে স্ট্রেসের কারণে যে অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, যার ফলে ওজন বাড়ে, সেটা কমানোর একটা পরোক্ষ উপায় হতে পারে হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুনের ফলে ‘ফিল গুড কেমিক্যালস’ নিঃসৃত হয়। এটি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। পরোক্ষ এই দিকটি ছাড়া ওজন কমার সঙ্গে কোনও যোগ নেই হস্তমৈথুনের।
৩. হস্তমৈথুন করলে কি বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়?
হস্তমৈথুন করলে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতায় সমস্যা হয় না, তবে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষতিকারক প্রভাব থাকতে পারে। হস্তমৈথুন করলে পুরুষের উর্বরতা হ্রাস করে এমন কোনও গবেষণা নেই। সপ্তাহে কয়েকবার কয়েক মিনিটের জন্য হস্তমৈথুন করলে শরীর পুরানো শুক্রাণু থেকে মুক্তি পায়। ঘন ঘন বীর্যপাত আসলে শুক্রাণুর গুণমান এবং গতিশীলতা উন্নত করতে পারে।
৪. হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিক কী?
অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে শারীরিক, মানসিক, এবং যৌনগত ক্লান্তি হতে পারে। শরীর থেকে স্পার্ম বেরিয়ে যাওয়ার পরে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। টেস্টোস্টেরন পুরুষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি হরমোন। হস্তমৈথুন স্টেরয়েড হরমোন, কর্টিসোল এর উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি বিপাকের হার বাড়ায় এবং এর ফলে ক্লান্তি এবং ক্লান্তিকর অনুভূতি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন অক্সিটোসিন, ডি এইচ ই এ, টেস্টোস্টেরন এবং ডি এইচ টি এর উৎপাদন হ্রাস করে। যার ফলে পিঠে ব্যথা অথবা অস্বস্তি তৈরি হয়।
৫. হস্তমৈথুন ছাড়ার উপায় কী?
হস্তমৈথুন ছাড়ার কিছু উপায় আছে – যোগব্যায়াম করুন, মেডিটেশন করুন, ম্যাসেজ ট্রিটমেন্ট নিন, পর্নো দেখা এড়িয়ে চলুন। এছাড়া, অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে যৌন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Birla Fertility & IVF aims at transforming the future of fertility globally, through outstanding clinical outcomes, research, innovation and compassionate care.
Talk to our fertility experts